তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু ‘একটি সেতুর জন্য অনেক কষ্ট করেছি। বিশেষ করে রোগী নিয়ে যাতায়াত করার সময় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এখন আর সেই দুর্ভোগ থাকবে না। সহজেই নদী পার হতে পারবো। সেতুটি আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা বজলুর রহমান। পেশায় তিনি একজন রাজমিস্ত্রি। জীবীকার তাগিদে তাকে প্রতিদিনই নদী পার হতে ভোগান্তিতে পড়তে হতো। নারায়ণগঞ্জের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু তথা নাসিম ওসমান সেতু হওয়াতে তিনি অনেক খুশি। সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর দুপাড়ের ৪ লাখ বাসিন্দা আনন্দের জোয়ারে ভাসছেন। রাজমিস্ত্রি বজলুর রহমান বলেন, নদী পারাপার হতে গিয়ে কত মানুষ মারা গেছে। ট্রলার দিয়ে গাদাগাদি করে নদী পার হতে হতো। প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে বের হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হই। শঙ্কায় থাকি পানিতে ডুবে মারা যায় কি-না। এখন থেকে আর কোনো শঙ্কা থাকবে না।’ একইভাবে মদনগঞ্জ এলাকার আরেক বাসিন্দা আলী নুর বলেন, ‘প্রতিদিন দীর্ঘ ভোগান্তি নিয়ে নদী পার হতে হতো। এখন থেকে আমাদের আর কোনো ভোগান্তি থাকবে না। বিশেষ করে অসুস্থ কাউকে নিয়ে নদী পার হতে হলে ভোগান্তির যেন কোনো শেষ থাকতো না। এখন সহজেই নদী পার হওয়া যাবে।’ ইউনুস নামে এক সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘প্রতিদিন বন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জ নিয়ে সবজি বিক্রি করি। আর এ সবজি নিয়ে যাওয়ার সময়ে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। দিগুণ ভাড়া গুণতে হয়। যার কারণে তেমন লাভবান হওয়া যেত না। এখন ভাড়ার পরিমাণটা কমে যাবে। একই সঙ্গে আমাদের লাভের পরিমাণও কিছুটা বৃদ্ধি পাবে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১২৩৪ দশমিক ৫০ মিটার দীর্ঘ ছয় লেন বিশিষ্ট সেতুতে স্থানীয় ধীরগতির যান চলাচলের জন্য দুটি লেন রাখা হয়েছে। সেতুর দুপাশের রেলিং ঘেঁষে রয়েছে ফুটপাত। হেঁটেও পাড়ি দেওয়া যাবে এ সেতু। অবকাঠামো নির্মাণ শেষে সেতু খুলে দিতে এখন চলছে অ্যাপ্রোচ সড়ক ও খুঁটিনাটি কাজ। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৬০৮.৫৬ কোটি টাকা। বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া, ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা দ্রুত শহরে পৌঁছাতে পারবেন এ সেতুর মাধ্যমে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জ থেকে পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী পরিবহন সেতুটি ব্যবহার করে দ্রুত সময়ে যেতে পারবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। ফলে চাপ কমে আসবে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড এবং আদমজী সড়কের ওপর। শুধু তাই নয়, এই ব্রিজের কারণে নারায়ণগঞ্জের ওপর দিয়ে মুন্সিগঞ্জের সাথে বাণিজ্য আরও সহজ হয়ে উঠবে।