মৌলভীবাজার-৪
শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৩৮ নম্বর আসন মৌলভীবাজার-৪। টিলা, চা বাগান আর সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেরা আসন এটি। ভোটারদের বড় একটি অংশ চা বাগানের শ্রমিক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। সংসদ সদস্য কে হবেন সেটা অনেকটা নির্ভর করে তাদের ভোটের ওপর। এদিক থেকে এগিয়ে আওয়ামী লীগ। এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষই এ আসনে তাদের বড় ভোটব্যাংক। গত তিন দশক এখানে টানা ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি মৌলভীবাজার-৪ ৃআসনের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভৈরবগঞ্জ বাজারে চায়ের দোকানে আড্ডায় উপস্থিত নাগরিকদের সঙ্গে এমপি এলাকায় আসেন কি না, রাজনৈতিক দলের নেতারা কেমন? আগামী নির্বাচনে কার অবস্থান কেমন, কাদের ভোট বেশি এসব বিষয়ে কথা হয় জাগো নিউজ টিমের। আবদুর রশিদ নামে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বলেন, ‘নেতারা নির্বাচনে দোয়া নিবার লাগি আসে। দোয়া নেওয়ার পর জয়ী হলে তো আর কাজ থাকে না।’ মুরগির ফার্মের ম্যানেজার সোহেল (২৮) বলেন, এখানে বিএনপি-আওয়ামী লীগ দুই দলের নেতাদেরই একই অবস্থা, ভোট ছাড়া কেউ আসেন না। পাশ থেকে সাইফুল নামে এক দিনমজুর বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের আসন। সুষ্ঠু ভোট হলেও এখানে নৌকা পাস করে।’ সত্তরোর্ধ্ব সোহেল নামে এক দোকানি বলেন, ‘আমার বয়সে আমি আমাদের ভোটকেন্দ্রে দেখিনি নৌকা হারতে। কিন্তু এবার হারছে। শুধু আমাদের কেন্দ্রে ধানের শীষ পাস করছে।’ নৌকা জেতার কারণ কী? জানতে চাইলে আড্ডায় একাধিক লোক বলেন, ‘এখানে চা বাগান বেশি। এক সাইডে চা বাগান আরেক সাইডে বস্তি। বস্তিতে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিরও ভোট আছে বেশ কিছু। কিন্তু চা বাগানের শ্রমিকরা একচেটিয়া নৌকায় ভোট দেয়। এছাড়া এখানে বেশ কিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক আছে। তাদের ভোটও নৌকায় পড়ে। যে কারণে নৌকা এগিয়ে থাকে সব সময়।’ বিষয়টি স্বীকার করেছেন ওই আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার এখানে সব জাতি ধর্ম-বর্ণের লোকদের ভোট আছে। ৪৬টি চা বাগান। চা বাগানের শ্রমিকরা বেশিরভাগ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। বাগানের শ্রমিকরা আমাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। আমি তাদের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি। বাগানে একটা স্কুলও করে দিচ্ছি।’ এই আসনে আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী অধ্যাপক রফিকুর রহমানও বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘু বেশি। চা শ্রমিক বেশি। তারা নৌকায় ভোট দেন। এখানে ৬০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার। নৌকা নিয়ে যে আসবে, সেই ভোট পাবে। ব্যক্তিগত ক্রেডিট নেই।’ মৌলভীবাজার-৪ আসনে ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আসছেন এবং নির্বাচিতও হচ্ছেন উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ। টানা ছয়বার মনোনয়ন পাওয়া এবং নির্বাচিত হওয়ার সুযোগে তিনি ‘স্বৈরাচারী’ হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিবার বা নিজের স্বার্থে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতাও করেছেন। তবে আবদুস শহীদের দাবি, তিনি দলের নেত্রী ও জনগণের মন জয় করতে পেরেছেন বলেই মনোনয়ন এবং জয় পান। এলাকা ঘুরে জানা যায়, মৌলভীবাজার-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান এমপি উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান এবং মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মনসুরুল হক। শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৩৮ নম্বর আসন মৌলভীবাজার-৪। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩০। ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৪২ পুরুষ এবং ১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮ জন নারী ভোটার। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ (২০১৮) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুস শহীদ পান ২ লাখ ১৬ হাজার ৬১৩ ভোট এবং বিএনপির মুজিবর রহমান চৌধুরী ৯৩ হাজার ২৯৫ ভোট পেয়েছেন। ১০ম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) আওয়ামী লীগের আবদুস শহীদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী। ৯ম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) আওয়ামী লীগের আবদুস শহীদ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। বিএনপির মুজিবুর রহমান চৌধুরী পান ৭৯ হাজার ৫৯৯ ভোট। ৮ম সংসদ নির্বাচনে (২০০১) আওয়ামী লীগের আবদুস শহীদ পান ৯৬ হাজার ৩২৯ ভোট এবং মুজিবুর রহমান চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পান ৭০ হাজার ৩৬৪ ভোট। ৭ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬) আওয়ামী লীগের আবদুস শহীদ ৯১ হাজার ৮১১ ভোট পান। জাতীয় পার্টির আহাদ মিয়া পান ৫৯ হাজার ৮২৫ ভোট। ৫ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১) আওয়ামী লীগের আবদুস শহীদ পান ৭৫ হাজার ৩২১ ভোট এবং জাতীয় পার্টির আহাদ মিয়া পান ৬০ হাজার ২১৫ ভোট।
|