প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন নতুন এলাকায় ঢুকছে পানি। জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে এ পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।অন্যদিকে কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর রেগুলেটর ধসে যাওয়ায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নোয়াখালীতে গত কয়েক দিনের ভয়াবহ বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৮ উপজেলা আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮৭ ইউনিয়ন ও ৭ পৌরসভার ১৯ লাখ ৮১ হাজার ৭০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। জেলায় এক হাজার ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে এক লাখ ৮২ হাজার ৩০৯ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি বিশেষ ও ছাত্র সমন্বয়করা আশ্রয় কেন্দ্রে খাওয়া পাঠাচ্ছে।
এ পর্যন্ত সরকারিভাবে নগদ ৪৫ লাখ টাকা, ৮৮২ টন চাল ও এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এখনো ৯১৮ টন চাল মজুত রয়েছে। ৮৮টি মেডিকেল টিম বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, সোমবার সকাল ১২টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে ২০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট।
এদিকে বন্যায় বেড়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে ১০৮ জন।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম বলেন, মেডিকেল টিম ছাড়াও হাসপাতালে সার্বিক চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
সেনবাগ উপজেলার বাসিন্দা ও সমাজকর্মী হাবীব জানান, ফেনীর মুহুরি নদীর উজানের পানি প্রবেশ করায় জেলার সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী উপজেলার আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলায় গত দুদিন বৃষ্টি তেমন না হলেও উজানের পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। অনেক জায়গায় ঘরবাড়ি ও সড়ক তলিয়ে গেছে। স্কুলে ঢুকে পড়েছে পানি। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট।
এদিকে সদয় পশ্চিমাঞ্চল বাঁন্দেরহাট, ওদারহাট, খলিফারহাট, আবুয়ার ডগি, এলাকায় পানি বেড়ে অনেক ঘরে ঢুকে পড়েছে। ৩০০ মানুষ বাঁন্দেরহাট আব্দুল মালেক উকিল কলেজে আশ্রয় নিয়েছে।বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার ৮টি উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। প্রতিটি বাড়িতে ৩ থেকে ৫ ফুট জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নিচু এলাকাগুলোতে যার পরিমাণ ৬ থেকে ৭ ফুট। বসত ঘরে পানি প্রবেশ করায় বাসিন্দারা নিকটস্থ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এলাকার সবগুলো প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। বসত ও রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়ায় খাবার সংকটে রয়েছে বেশিরভাগ মানুষ।জেলার প্রধান সড়কসহ প্রায় ৭৫ ভাগ সড়ক কয়েক ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়কগুলোতে যান চলাচল অনেকটাই কম। নোয়াখালী পৌর বাজারে পানি উঠে পড়লে রাস্তার ওপর মাছ ও সবজি বিক্রি হচ্ছে। এতে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।