রাজশাহীর পুঠিয়া এলজিইডির নিম্নমানের রাস্তার কজে সরকারের অর্ধকোটি টাকা জলে
Date : 17-7-2024
রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহী পুঠিয়া বেশ কিছু রাস্তার নির্মাণ কাজে এলজিইডি কতৃপক্ষের চড়ম গাফিলতি আর নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সংস্কার কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরজমিনে গিয়ে সেগুলির সত্যতা মিলেছে, ১৫ দিনও টিকে নাই সেই রাস্তাগুলি।
ওই সকল এলাকার বহু মানুষ মনে করছেন, তদারকি ও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তার সংস্কার কাজ করায় এসব রাস্তার স্থায়িত্ব খুবই কম। যার ফলে মাত্র দুদিনের সামান্য বৃষ্টিপাতেই ভেঙ্গে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে সেসব রাস্তা। এসব রাস্তার কোনোটির বয়স মাত্র দুসপ্তাহ আবার কোনোটির বয়স মাত্র ৩ মাস। অনেকে মনে করেন এমন গাফিলতি আর নিম্নমানের কাজের রাস্তা এর আগে তারা দেখে নি। ওইসব রাস্তা নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগের যেনো অন্ত নেই। এমন কাজে উপজেলা প্রকৌশলীর প্রতি একের পর এক ব্যক্তি করছেন নানান রকম মন্তব্য।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সম্প্রতি কুরবানীর ঈদের এক সপ্তাহ পর এখন থেকে প্রায় ১৮ দিন আগে ২৪ লাখের বেশি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়েছে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার রাস্তা। সেই রাস্তাটি দু সপ্তাহ না যেতেই ভেঙ্গে ও কার্পেটিং এর পাথর ওঠে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। তেমনি একটি রাস্তা শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের সাধনপুর বাজার সরদার পাড়া জামে মসজিদ হতে বিদির পুর মধ্য পাড়া জামে মসজিদ পর্যন্ত। ওই রাস্তাটি কয়েক জায়গায় ইতিমধ্যে ভেঙ্গে গেছে। রাস্তার মুল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স এম.এম ট্রেডার্স। পরে হাসিব নামের আরেক ব্যক্তি কিনে নিয়ে ওই কাজ করেন। পাশাপাশি কোথাও কোথাও রাস্তার ভাঙ্গন রোধে দেওয়া হয়েছে প্রটেকশন ওয়াল। কিন্তু কাজে আসছে না সেটাও। এ যেনো সরকারি মাল, নদীতে ঢাল অবস্থা।
এছাড়াও একই উপজেলার ভালুকগাছি ইউনিয়নের নওপাড়া বাজারের গ্রামীণফোনের টাওয়ারের নিকট হতে দাসমাড়িয়ার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে রোজার ঈদের ২দিন আগে তাড়াহুড়া করে। সেখানেও বরাদ্দ হয় প্রায় ২৪ লাখ টাকা। রাস্তাটি ছিল প্রায় ৩০০ মিটার সেটিরও ভাঙ্গন শুরু হয়ে গেছে। ৩০০ মিটার ওই কাজটি করেছেন নাটোরের শুভ নামের আরেক ঠিকাদার।
ইদানিং লক্ষ্য করা গেছে পুঠিয়া উপজেলায় রাস্তার সংস্কার কার্পেটিং নির্মাণ কাজ সহ অন্যান্য কাজের বড় একটা অংশ নাটোরের শুভ নামের ঠিকাদারকে করতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে বারবার এমন নিম্নমানের কাজ করেও বহাল তবিয়তে থাকছেন শুভ, হাসিবরা।
এসব বিষয়ে খোঁজখবর নিতে সরেজমিনে ওইসব এলাকায় গেলে পুঠিয়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এর উপর ব্যাপক ক্ষোভ ঝাড়েন স্থানীয়রা। ওই এলাকার বহু মানুষ বলছেন দুদিনের বৃষ্টিতে অন্য রাস্তাগুলো নষ্ট হল না, তাহলে কেন এই রাস্তা নষ্ট হলো। এভাবে সরকারের এতগুলো টাকা নষ্ট করার মানেটা কি। যদিও তাদের এসব প্রশ্নের উত্তর থাকলেও তা কেবলই অজানা। ওই এলাকার মানুষেরা চাইছেন রাস্তা গুলো আবারো টেকসই করে তৈরি করে দেওয়া হোক।
অনার্স পড়ুয়া নাসিম রায়হান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, কাজ শেষ না হতেই রাস্তা দেবে গিয়েছিল। তাদেরকে বলেছিলাম তারা ঠিক করে নি।
রাস্তার এমন দুর্দশার বিষয়ে এলাকার সাজিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, রাস্তা তৈরি করার সময় আমরা বুঝতে পারছিলাম রাস্তাটির কাজ ভালো হচ্ছিল না
এসব নিয়ে আমরা প্রতিবাদও করেছিলাম কিন্তু তারা কেউ শোনেনি।
কাজের বিষয়ে ঠিকাদার হাসিব বলেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে, ঠিক করে দেওয়া হবে কোনো সমস্যা নাই।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌসুমী রহমান বলেন, আমাদের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ দ্বারা, সংসদ সদস্য পুঠিয়া-দুর্গাপুর, যেভাবে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে বরাদ্দ নিয়ে আসছে এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য, আর সেই কাজগুলো যদি টেকশই না হয় তাহলে আমাদের ক্ষতি, তাই আমি উপজেলা প্রকৌশলীর নিকট অনুরোধ করছি কেনো এভাবে রাস্তা ভেঙ্গে গেলো কোথায় ঘারতি রয়েছে তা খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
রাস্তা দুটির এমন দুর্দশা নিয়ে কথা হয় পুঠিয়া উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খানের সাথে। তিনি বলেন, বৃষ্টি হওয়ার ফলে রাস্তা ভেঙ্গে গিয়েছে। তবে রাস্তার বিল এখনো পরিশোধ করা হয়নি। সম্পুর্ন রাস্তার কাজ বুঝে নিয়ে তার পর বিল পরিশোধ করা হবে।