মাহমুদুল হাসান
গুলশান এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা মিলন মোল্লা এখনো স্পা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি গুলশানসহ রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় স্পা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পর্কিত ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে এসব ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য নারীদের শারীরিক ও মানসিক শোষণসহ বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে তার ব্যবসা পরিচালনা করছেন আজাদ ও দেহরক্ষী আঁখি।
অভিযোগের মূল বিষয়
মিলন মোল্লা, যিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত, গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ স্পা সেন্টার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব স্পা সেন্টারে প্রাথমিকভাবে "স্বাস্থ্য সেবা" দেওয়ার কথা থাকলেও, সেখানে গ্রাহকদের জন্য "বিশেষ সেবা" প্রদান করা হয়, যা সাধারণত অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে যে, এসব স্পা সেন্টারে নারীদের শারীরিক শোষণ, যৌন নির্যাতন এবং অন্যান্য অনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালিত হয়।
এছাড়া, মিলন মোল্লা এ ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য স্থানীয় দালাল চক্রের সহায়তাও নিয়েছেন। তাদের পরিচয় হলো আজাদ ও দেহরক্ষী আঁখি। এখনো এসব কার্যক্রমে তার রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে পুলিশের নজরদারি থেকে সুরক্ষা পাচ্ছেন।
পুলিশের ভূমিকা ও অভিযোগ
এ ব্যাপারে পুলিশ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা অবৈধ স্পা সেন্টারগুলোতে অভিযান পরিচালনা করলেও, মিলন মোল্লার ব্যবসা সম্পর্কে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অনেকেই মনে করছেন, তার রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পুলিশ তাকে লক্ষ্যবস্তু করার সাহস পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, "আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তবে তদন্ত চলছে। তবে, বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে জড়িত হওয়ায় কিছুটা জটিলতা তৈরি হচ্ছে।" তবে, পুলিশ জানিয়েছে যে, আইন অনুযায়ী তদন্ত চলবে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
গুলশান এলাকার বাসিন্দারা এবং ব্যবসায়ীরা মিলন মোল্লার স্পা ব্যবসা পরিচালনার বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এসব স্পা সেন্টার এলাকাটির সামাজিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য বিপদজনক। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, "এই ধরনের কার্যক্রম এলাকার নিরাপত্তা এবং শান্তিকে বিঘ্নিত করছে। আমরা জানি না, পুলিশ কেন কিছু করছে না।"
নারী অধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া
নারী অধিকার সংগঠনগুলো এই ধরনের ব্যবসা পরিচালনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। তারা বলছেন, "এ ধরনের স্পা সেন্টারগুলো নারীদের শোষণ এবং যৌন নির্যাতনের একটি বড় উৎস। যখন একজন রাজনৈতিক নেতা এই ধরনের ব্যবসায় জড়িত হন, তখন তা আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।" তারা সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন, যাতে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং অবৈধ ব্যবসাগুলো বন্ধ করা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের কার্যক্রম সড়ক নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তারা বলেন, "এই ধরনের ব্যবসা শুধু যে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, তা নয়, এটি দেশের আইন-শৃঙ্খলা এবং নৈতিকতা সম্পর্কেও গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করছে।"
গুলশান এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা মিলন মোল্লা স্পা ব্যবসা চালানোর অভিযোগ একটি গুরুতর বিষয়, যা শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা এবং পুলিশের কার্যক্রমের ওপর প্রশ্ন তুলছে না, বরং এটি সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা এবং সামাজিক শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে একটি বড় সংকট তৈরি করেছে। এই ধরনের ব্যবসার বিরুদ্ধে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যদি দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে সড়ক নিরাপত্তা এবং সমাজে নৈতিকতার অবনতি হতে পারে।
এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আসছে রবিবার জাতীয় দৈনিক ভোরের সময় পত্রিকায়। সাথেই থাকুন ও চোখ রাখুন।
|