দুটি পাতা একটি কুড়ি বাংলাদেশ তুমি কী শুনতে পাও সিলেটের চা শ্রমিকদের আহাজারি?
Date : 17-8-2022
সোহেল সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা:
চায়ের জন্য বিখ্যাত বাংলাদেশের সিলেটের মাটি যে মাটিতে সাহিত্য আছে শাহজালাল, শাহ পরানের মাজার এবং সৌন্দর্যে ভরা সিলেট সিলেটের মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, কুলাউড়া , হবিগঞ্জ,বিভিন্ন এই পাহাড় চোখে পড়ার মত দৃশ্য অনেক আছে কিন্তু চা-বাগানের দৃশ্যের মত সৌন্দর্য একটা ফটোসেশন একটা সেলফি না নিলে যেন অফুরন্ত রয়ে গেল সিলেট ভ্রমনের ভ্রমন পিয়াসিদের জন্য আফসোস থেকে যায় কিন্তু সুন্দরের আলোতে চা শ্রমিকদের রয়েছে বেদনাদায়ক আহাজারি যা চিৎকার করে বলতে পারছেনা বলতে গেল পরে বাধার মুখে আমরা অভিশপ্ত চা বাগানি কষ্টে আছি। শুধু অল্প একটু চাহিদা দুমুঠো ভাত যেন সন্তান পরিজনদের কে নিয়ে খাওয়ার তবু তাদের সাথে কথা হলে তারা হাসিমুখে কথা বলে। বলতে পারেনা কষ্টের কথা বুকটা ফেটে যায় তবু বেঁচে আছে তারা।
দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে আমাদের দেশের স্বনামধন্য চা পাতা কিন্তু চা পাতা উপার্জনে যাদের শ্রম-ঘাম রয়েছে তারা আজ অবহেলিত দু`মুঠো ভাত খাওয়ার জন্য যেন পাহাড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে চা শ্রমিক তারা চাইলেও যে একটি ভাল খাবার খাবে তা পারে না শ্রমের যে নির্মল মূল্য তারা সঠিকভাবে না পাওয়ার কারণে একই ধারাবাহিকতায় ধনাঢ্য ব্যক্তিরা যারা আছে তারা প্রতিদিন মাংস যেমন খেতে ভালোবাসে না এমন কিছু শ্রেণীর লোক আছে যা নিম্ন খাবার ডাল ভাত ভর্তা সবসময় পছন্দ করেনা হতভাগা চা-শ্রমিকদের যুগ যুগ ধরে বয়ে আসছে কৃতিত চা শ্রমিক তারাও তো মানুষ একটি ভাল-মন্দ খাবার চাহিদা থাকতে পারে তাও কিনে খাবার সাধ্য নাই কিন্তু বাংলাদেশের সর্বনিম্ন অল্প আইয়ের শ্রমিক তারা হল চা শ্রমিক ১২০ টাকা সর্বোচ্চ পরিশ্রমে যদি পাইসে বাংলাদেশ ডিজিটাল রূপে রূপান্তর হয়েছে কিন্তু সিলেটের চা বাগানের শ্রমিকদের কপালে জোটেনি ডিজিটালের ছোঁয়া তবুও তারা জীবনের সাথে যুদ্ধ করে প্রতিদিনই খাবারের রেসিপি তে একটি খাবারই খেয়ে থাকে তারা।
চা শ্রমিকরা চা পাতার একটা ভর্তা খায়। কচি পাতাগুলো খুব কুচিকুচি করে তাতে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, সেদ্ধ আলু আর চানাচুরকে সরিষার তেল দিয়ে মাখানো হয়। গরম ভাত অথবা রুটির সাথে খায় তারা। সরোজমিনে ভোরের ডাক এর এই প্রতিবেদক তিনিবলেন আমি খেয়েছি, খুব একটা সুস্বাদু কিছু না। অথচ তারা বলতে গেলে প্রতিবেলায় খায়। তবে প্রতিবেলায় মাখানোর জন্য সরিষার তেল আর চানাচুর পাওয়া যায় না জোগাতে পারে না । তবুও তারা খায় কারণ দুইশো টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগীর এই বাংলাদেশে একদিনে তাদের বেতন ১২০ টাকা। এক আঁটি শাক কিংবা এক কেজি সবজি কেনার চেয়ে চা পাতার ভর্তা দিয়ে দু`মুঠো ভাত খেয়ে ফেলাই তাদের জন্য সহজ।
কারণ শ্রমিকদের ১২০ টাকা প্রতিদিনের ইনকামের ব্যাপারটা একদিনে ১২০ এরকমও না। মানে একজন চা শ্রমিক যদি দিনে ২৪ কেজি চা পাতা তুলতে পারে তাহলে সে পাবে ১২০ টাকা। বেশিরভাগ শ্রমিক ২৪ কেজি তুলতে পারেন না, ১৪-১৫ কেজি তোলেন সর্বোচ্চ। আর একটু বয়স্ক যারা তাদের চা পাতা তোলার পরিমাণ আরও কম। ফলে তারা পুরো টাকাটা পান না।
এই অঞ্চলে চায়ের চেয়ে রোমাঞ্চকর জিনিস আর কী আছে? আমাদের প্রেম, আড্ডা, গল্প, গান, বিপ্লব, বিদ্রোহ কোনো কিছুই চা ছাড়া হয় না বিভিন্ন দেশে চা পাতা রপ্তানি করে থাকি । বিজ্ঞাপন মারফত আমরা জানতে পারি কাপ শেষ হলেও রেশ রয়ে যায়, এক কাপ চায়ে তাজা হয়ে যাওয়া যায় নিমেষেই, এমনকি চায়ে চুমুক দিয়ে আমরা বদলে দিতে পারি পরিস্থিতি, প্রতিবাদ করতে পারি যেকোনো অন্যায়ের, পেয়ে যেতে পারি যুগান্তকারী আইডিয়া। কিন্তু বিজ্ঞাপনে চা শ্রমিকরা সারাজীবন ব্যাকগ্রাউন্ড প্রপস। দুটি পাতা একটি কুড়ি তোলার সুন্দর দৃশ্যটি আমাদের কাছে আরও সুন্দর হয়ে ওঠে দারুণ সিনেমাটোগ্রাফিতে। আর আজকাল তো নগরীর অভিজাত চায়ের দোকানে এক কাপ চা বিক্রি হয় ১২০টাকায়। সে চায়েরও হয় ফুড রিভিউ। অথচ শ্রমিকদের ১২০টাকার অসুন্দর জীবনের দৃশ্য সিনেমাটোগ্রাফিতেও আসে না, খবরেও খুব একটা পাওয়া যায় না। কারণ তারা চা পাতা ভর্তা খেয়েই কাটিয়ে দিচ্ছে এ বাংলা দেশের বেহেশতি এই জীবন!
চা শ্রমিকরা দৈনিক ৩০০ টাকা পারিশ্রমিকের জন্য আন্দোলন করছে। তাদের আন্দোলনের প্রতি আমি সংবাদকর্মী হিসেবে দবিতে পূর্ণ সমর্থন রইলো। কিন্তু তারা যে দাবী রেখেছে তা তেমন কোন বড় কোন কিছু না এই দাবিটি পূরণের জন্য বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা দেশনেত্রী শেখ হাসিনা চিন্তা চেতনা ঘুরে যেতে পারে শ্রমিকদের কষ্টের আহাজারির বদলে দেখা যেতে পারে চা শ্রমিকদের মুখে সুখের হাসি।