যদিও গেলো বুধবার (২৭ জুলাই) থেকে পরিস্থিতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়ে লঞ্চ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর অনেকটাই যাত্রী শূন্য হয়ে গিয়েছিল লঞ্চগুলো, তবে ভাড়া কমানোর পর লঞ্চগুলোতে আগের থেকে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। যদিও এর মধ্যেও কোনদিন খরচের টাকা উঠছে, আবার কোনদিন উঠছে না। বরিশাল-ঢাকা রুটের সুরভী লঞ্চ কোম্পানির ম্যানেজার মো. রেশাদ বলেন, পরিস্থিতি আগের থেকে কিছুটা ভালো হয়েছে। রোববার তুলনামূলক যাত্রী কম থাকার কথা থাকলেও বরিশাল থেকে ছেড়ে যাওয়া সব কয়টি লঞ্চের ডেকেই যাত্রীতে ভরা ছিল। একটি আপ-ডাউন ট্রিপে লঞ্চভেদে ৫-৬ লাখ টাকা খরচ হয় জানিয়ে তিনি বলেন, আগে যেখানে লঞ্চের কেবিনের প্রতি যাত্রীদের ঝোঁক ছিল, তেমনটা এখন নেই। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই লঞ্চগুলোর কিছু কেবিন খালি যাচ্ছে। লঞ্চের স্টাফরা জানান, বর্তমান ঢাকা-বরিশাল রুটে পারাবত কোম্পানির লঞ্চগুলো একটা নিয়মে চলছে, আর সুরভী-সুন্দরবন, অ্যাডভেঞ্চার, মানামী, কীর্তনখোলা কোম্পানির লঞ্চগুলো অপর এক নিয়মে চলছে। এর মধ্যে পারাবত কোম্পানি যাত্রীর চাপ বুঝে ভাড়া কম-বেশি করছে। আর অন্য কোম্পানিগুলোর বড় লঞ্চ ডেকে যাত্রীপ্রতি ভাড়া নিচ্ছে ২০০ টাকা এবং ছোট লঞ্চ যাত্রীপ্রতি ডেকে ভাড়া নিচ্ছে ১৫০ টাকা। কিন্তু এ রুটে সরকার নির্ধারিত ডেক ভাড়া ৩৫২ টাকা। আর এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকার এসি ও নন এসি সিঙ্গেল কেবিন বর্তমানে ৮০০ থেকে এক হাজারে বিক্রি করছে। দুই হাজার ৪০০ টাকার ডাবল কেবিন এক হাজার ৮০০ ও দুই হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ৭০০ টাকার সোফার ভাড়া কমে হয়েছে ৬০০ টাকা। তারপরও কেবিনে যাত্রী না পেয়ে বেশিরভাগ সিঙ্গেল কেবিনে একজন যাত্রীর সঙ্গে আরেকজন যাত্রীর ভাড়া ফ্রি করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে এক সিঙ্গেল কেবিনে দু’জন যাতায়াত করতে পারছে। আবার ডাবল কেবিনে দু’জনের অধিক যাত্রী থাকলে, তাদের ডেকের ভাড়াও মওকুফ করে দেওয়া হচ্ছে। সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, আগের থেকে ডেকের যাত্রী বাড়লেও কেবিনের তেমন একটা চাপ এখনও তৈরি হয়নি। এখন সব কোম্পানি প্রায় একই নিয়মে ভাড়া কমিয়ে লঞ্চ পরিচালনা করছে। এর সুফল পেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে মনে করেন তিনি। যদিও যাত্রীরা বলছেন, বিভিন্ন সময় নানান অজুহাতে লঞ্চ কোম্পানিগুলো তাদের ভাড়া বাড়িয়ে গেছে কিন্তু এখন ভাড়া কমিয়েও তারা যাত্রী পাচ্ছে না। মনিরুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, লঞ্চ কোম্পানিগুলো যাত্রী ও সরকারকে জিম্মি করে ভাড়া বাড়াতো বছর বছর। তার ওপর সিন্ডিকেট বা রোটেশন করে লঞ্চ চালনা, ডেকের জায়গা ও কেবিন দখল করে দালালের মাধ্যমে চড়া দামে বিক্রি করানোসহ বিভিন্ন নৈরাজ্য ছিল। কিন্তু এখন সেই লঞ্চে সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই ভাড়া কমে গেছে, ডেকে জায়গার সংকট নেই, কেবিন ঘাটে গিয়েই পাওয়া যাচ্ছে। যদিও ভাড়া কমানো সম্ভব না হওয়ায় এরই মধ্যে এ রুটের দিবা-সার্ভিসে থাকা এমভি গ্রিনলাইন-৩ তাদের সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে। এই কোম্পানির ম্যানেজার আব্দুস ছাত্তার বলেন, ক্যাটামেরান সার্ভিস হওয়ায় দিবা সার্ভিসে থাকা তাদের জাহাজের সিট ভাড়া কমানো সম্ভব নয়। আপ-ডাউনে কমপক্ষে ৫০০ যাত্রী হলে খরচ পোষানো যায়। তবে ঈদ-উল-আজহার পর থেকে যাত্রী সংখ্যা খুবই কমে যাওয়ায় তারা সার্ভিস বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে পদ্মা সেতু চালও হওয়ার কারণে সড়কপথে তাদের কোম্পানির বাসে যাত্রীর চাপ রয়েছে। জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটাসহ দক্ষিণের ৬ জেলায় প্রায় অর্ধশত নতুন বাস কোম্পানি তাদের সার্ভিস শুরু করেছে। পুরাতন কোম্পানি ও নতুন কোম্পানি মিলিয়ে প্রায় ৫০০ বাস সার্ভিসে নেমেছে, আর ভাড়ার সঙ্গে সময় কম লাগায় সড়কপথে যাত্রীর চাপও বেড়েছে।