চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের জানুয়ারিতে হতে পারে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। এবারে নির্বাচন গত দুটি নির্বাচনের চেয়ে চ্যালেঞ্জিং হবে এমনটা ধরে নিয়ে মাঠ প্রশাসন সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসাবে উপসচিব পদমর্যাদার ২৩২ জনকে ডিসি পদের জন্য সাক্ষাৎকারের সূচি প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সাক্ষাৎকার শেষে একটি ফিট লিস্ট তৈরি করে পাঠানো হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে পদায়ন পাবেন নির্বাচনকালীন বেশ কিছু জেলা প্রশাসক (ডিসি)। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে ২৩ জেলায় নতুন ডিসি পদায়ন দেওয়া হয়। এছাড়া ১৭ জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় পদায়ন করা হয়েছে। সামনে বেশ কিছু জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করে পদায়ন করা হবে নতুন কর্মকর্তাদের। এছাড়াও নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন ডিসি পদে রদবদল করতে চাইলেও এই ফিট লিস্ট থেকেই করতে হবে।
এই পদে নিয়োগের জন্য ফিট লিস্ট করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ফিট লিস্ট প্রস্তুত করতে আজ (শনিবার) থেকেই মৌখিক পরীক্ষা শুরু করবে প্রশাসনের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের শীর্ষ কমিটি সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)।
এবার ডিসি পদায়নে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫ ও ২৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা প্রাধান্য পাবেন। শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ৬০, ৯ মার্চ ২৮, ১১ মার্চ ৫৯, ১২ মার্চ ৩০ ও ১৮ মার্চ ৫৫ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে। এসএসবি কর্মকর্তারা বলেন, সাক্ষাৎকারে মূলত ডিসি হতে ওই কর্মকর্তার আগ্রহ, মাঠ প্রশাসনের কাজ করার অভিজ্ঞতা, সুনাম বা কোনো বদনাম রয়েছে কি-না এগুলো দেখা হয়।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, ডিসি নিয়োগের আগে সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া মূলত আনুষ্ঠানিকতা। ডিসি নিয়োগের আগে ওই কর্মকর্তার ব্যাপারে গোয়েন্দা রিপোর্ট, আগের কাজ করার দক্ষতা, সততা ও সরকারের প্রতি আনুগত্যের বিষয়টি জোরালোভাবে দেখা হয়। বিশেষ করে তার ও পরিবারকেন্দ্রিক রাজনৈতিক-সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি খুব বেশি আমলে নেওয়া হয়। তিনি ছাত্রজীবনে কোন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সে বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে কর্মরত ডিসিদের মধ্যে তিন বছর বা তার বেশি হয়েছে এমন সিনিয়রদের রিপ্লেস করা হবে। এরই অংশ হিসাবে ফিট লিস্ট করা হবে। এটি একটি রুটিন ওয়ার্ক। এটাকে নির্বাচনী মাঠ প্রশাসন অন্য কিছু বলার সুযোগ নেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে ২০২২ সালে ১১ উপসচিবকে বিভিন্ন জেলায় ডিসি হিসেবে নিয়োগের পর ‘ছাত্রদল-সংশ্লিষ্টতার’ অভিযোগে তৎকালীন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা-৪ শাখার উপসচিব নাফিসা আরেফীনের নিয়োগ বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাকে নীলফামারীতে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে মেহেরপুরে ডিসি পদে নিয়োগ পাওয়ার পর ছাত্রদল-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো. শহিদুল ইসলামকেও পদায়ন করা হয়নি। একই অভিযোগ ছিল আরও দুইজনের বিরুদ্ধে। যদিও শেষ পর্যন্ত তাদের পদায়ন বাতিল করা হয়নি।
কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া বিসিএস ২৪, ২৫ ও ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তারা বর্তমানে প্রশাসনে কাজ করছেন। বর্তমানে ২৪ ও ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে ডিসি বেশি। ২৫তম ব্যাচের নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৪ সালে। তারা চাকরিতে যোগদান করেন ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট। ২৪তম ব্যাচের নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৪ সালে। তারা চাকরিতে যোগদান করেন ২০০৫ সালের ২ জুলাই। ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়োগ হয় ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর।
অন্যদিকে প্রশাসন ২৭তম ব্যাচ থেকে প্রথমবারের মতো ডিসি নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। এ ব্যাচটির নিয়োগ প্রক্রিয়া বিএনপি সরকারের সময় শুরু হলেও চূড়ান্ত নিয়োগ হয় ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। বিএনপি সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ডিসি নিয়োগের ব্যাপারে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করবে সরকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনে রদবদল ও কর্মকর্তাদের কর্মস্থল পরিবর্তন একটি রুটিন ওয়ার্ক হলেও জাতীয় নির্বাচনের আগে ডিসি পদে রদবদলে সবার নজর থাকবে। নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব মূলত পালন করবেন ডিসিরা। যেকোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিল করার ক্ষমতা ডিসির হাতে ন্যস্ত থাকে। সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনী থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসিদের অধীনে। স্বাভাবিক সময়ে পুলিশ বাহিনী জেলায় স্বাধীনভাবে কাজ করলেও নির্বাচনের সময় তারা ডিসির কর্তৃত্ব মেনে চলে।
|