* মহান একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের শহীদদের পুণ্য রক্ত স্নানে-জেগে-ওঠা এই দেশ, আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি, অথচ মাতৃভাষা এখনো আমাদের হৃদয়ে গর্বে ভালবাসায় গৌরবে বুক জুড়ে বসতে পারেনি। আমাদের অনেক ভাগ্য যে, কিছুকাল যাবৎ কিছু দেশব্রতী মানুষ মাতৃভাষার ব্যাপক অনুশীলনের পদ্ধতি ও ভাষার স্বাধিকার রক্ষা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন । কবি, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও সংস্কৃতি কর্মীরা তাদের মধ্যে অন্যতম। : উনিশ শতকের গোড়া থেকে বাংলা গদ্য রচনা আরম্ভ হলে বাংলা বানানে নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ ব্যপারটি অনুধাবন করে একটি বানান রীতি প্রণয়নের জন্য ১৯৩৫ খৃিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ করেন । শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এ প্রস্তাব সমর্থন জানান । এই পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ‘কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বানান সংস্কার সমিতি` গঠন করে এবং ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মে প্রথম বাংলা বানানের নিয়ম প্রকাশ করে। যুগের প্রয়োজনে পরে এই নিয়ম নানা সময় সংশোধিত ও পরিমার্জিত হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি বাননের সূত্র নিয়ে আলোকপাত করা যাক । বানানের সূত্র পৃথকভাবে মনে রাখা যায়, পদ্যে ও সূত্রকে সামিনবদ্ধ করা যায়, যেমন- দেশ, ভাষা, জাতির নামে কার হয় ‘ই’ অপ্রাণী, ইতর প্রাণিতা-ও জেনেছি, উভয় ক্ষেত্রে ‘ই’ - কার নিশ্চিত মানি সংস্কৃতের স্ত্রী ‘ঈ’- কার জানি । বিদেশী শব্দে `ষ` হবেনা কখনো তৎসম ভিন্ন শব্দে ‘ন’ হয় জেনো, রেফ থাকলে বর্ণে দ্বিত্ব না-হয় অন্তে বিসর্গ বর্জন জানিবে নিশ্চয়। জগৎ-বাচক-বিদ্যা-ত্ব-তা-নী-ণী হলে শব্দান্তের ‘ঈ’ ই-কার সকলেই বলে । *বানান - সূত্রটি ব্যাখ্যা করলে দাড়ায়- ১. যে কোন দেশ, ভাষা ও জাতির নাম লিখতে ই/ ঈ-কার দেওয়ার প্রশ্ন এলে তাতে নিশ্চিন্তে ই- কার (ভ) দেয়া যাবে। যেমন: গ্রিস, জার্মানি, চিন, ইতালি ইত্যাদি । (ব্যতিক্রম: শ্রীলংকা, মালদ্বীপ) ভাষা: হিন্দি, সাঁওতালি, আরবি, ফারসি ইত্যাদি। জাতি: বাঙালি, পর্তুগিজ, তুর্কি ইত্যাদি। ২. অপ্রাণীবাচক শব্দ ও ইতর প্রাণীবাচক তৎসম শব্দের শেষে ই/ ঈ- কারের মধ্যে ই- কার হবে, যেমন: অপ্রাণীবাচক শব্দ: বাড়ি, গাড়ি, শাড়ি, চাবি ইত্যাদি । ইতরবাচক শব্দ: পাখি, হাতি, চড়ুই, মুরগি ইত্যাদি। ৩. সংস্কৃত বাতৎসম স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে ‘ঈ’ হবে, যেমন: জননী, স্ত্রী, নারী,সাবিত্রী ইত্যাদি। ৪. বিদেশি শব্দের বানান বাংলায় লেখার সময় কখনো ‘ষ’ লেখা যাবে না, যেমন: স্টুডিও, ফটোস্ট্যাট ইত্যাদি। ৫. তৎসম বা সংস্কৃত কতিপয় শব্দ ছাড়া অন্য সব শব্দের বানানে `ণ` হবেনা, হবে ‘ন’ যেমন: কর্নেল, কর্নার, বামুন ইত্যদি। ৬. বানানে যে বর্ণের উপর রেফ থাকবে, সেই বর্ণে দ্বিত্ব হবেনা, যেমন: কার্যালয়, নির্দিষ্ট, ধর্মসভা, ইত্যাদি। ৭. বিষ্ময়সূচক অব্যয় (যেমন: বা:/ ছি:/ উ: ইত্যাদি) ছাড়া বাংলা কোন শব্দের শেষে বিসর্গ রাখা যাবেনা । ৮. শব্দের ঈ- কারন ব গঠিত শব্দে সাধারণত ই- কার পরিণত হয়, যেমন: প্রাণী + বিদ্যা = প্রাণিবিদ্যা, প্রাণী + জগৎ = প্রাণি জগৎ, মন্ত্রী + সভা = মন্ত্রিসভা ইত্যাদি । ৯. শব্দে উর্ধ্ব কমা লেখা যাবেনা, যেমন: হ`ল হবে হল, দু`টি হবে দুটি তার হবে তার ইত্যাদি। ১০. বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে একই নীতি মালায় বাংলা বানান লেখা কর্তব্য, ‘ধর্মীয় কারণ’,‘ বিশেষ বিবেচনা’, ‘বহুল প্রচলিত` ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে বিদেশি শব্দের নীতিমালা জটিলনা করা, যেমন: আযান = আজান, রোযা = রোজা, নব = নবি, স্পীকার =স্পিকার । কতগুলো শব্দে স্বভাবতই ‘ণ’ হয়, যেমন: চাণক্য, মাণিক্য, গণ, বাণিজ্য, লবণ, মণ, বেণু, বীণা, কণিকা ইত্যাদি। *মোঃ আঃ আউয়াল, সিনিয়র শিক্ষক (বাংলা), নড়িয়া বিহারী লাল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নড়িয়া, শরীয়তপুর।
,
|