রাজশাহীতে শুরু হল আম নামানো শুক্রবার থেকে আমের হাট
Date : 19-5-2024
আজ রাজশাহী ও নওগা জেলায় আমগাছ থেকে আম পাড়া শুরু হলো। চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম নামানো শুরু হবে জুন মাসের আনুমানিক ২০ তারিখ থেকে । রাজশাহীতে প্রসাশনের বেঁধে দেয়া সময়সূচি অনুযায়ী গুটি জাতের পরিপক্ব আম পাড়তে শুরু করেছেন বাগান মালিকরা। সে হিসেবে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে পাকা আমের মৌসুম। যদিও আম ভালোভাবে পরিপক্ক না হওয়ায় সবখানে আম পাড়া শুরু হয়নি। এরপর গোপালভোগ জাতের আম পাড়া শুরু হবে আগামী ২৫ তারিখের পর থেকে। ১৭মে (শুক্রবার) থেকে রাজশাহীর বানেশ্বরে বসবে জমজমাট আমের হাট । সেই হাঁটে রাজশাহী সহ আশেপাশের সকল জেলার আম- ব্যবসিকরা খুচরা ও পাইকারি মূল্যে বিক্রি করবে আম ।
১৬মে (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকেই রাজশাহী নগরী ও আশপাশের এলাকা ঘুরে আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা আম পাড়ার প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে।
সকালে নগরীর বায়া ও দামকুরা হাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় আম পাড়ছেন চাষীরা। তারা বলছেন, এখনও পুরোপুরি আম পরিপক্ক না হওয়ায় তারা গাছের যে আমগুলো পরিপক্ক হয়েছে শুধু সেগুলোই দেখে নামাচ্ছেন।
নগরীর দামকুরা হাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাগানে অল্পসংখ্যক চাষি ও ব্যবসায়ী আম পাড়ছেন। তাদের দাবি, এখনো বাগানে গুটি জাতের আম সেভাবে পাকা শুরু হয়নি। তবে সময় ঘনিয়ে এসেছে, এখন গুটি জাতের সঙ্গে অন্য জাতের আমও পাকা শুরু হবে।
রাজশাহী মহানগরীর তরুণ আম ব্যবসায়ী ইনজামামুল হক বলেন, জেলা প্রশাসকের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী আজ থেকে গুটি আম নামানো শুরু হয়েছে। আমার বাগানে এবার তেমন আম হয় নাই । আমার বাগানে আমের মুকুল অনেক হয়েছিল কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেগুলি ঝরে গেছে। যতটুকু আম আমার বাগান থেকে আসবে সেটা আমার ফ্যামিলির নিজেদের জন্যই লাগবে। তবে আমার পাশের বাগানের ব্যবসিকরা শুক্রবারে সবাই রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে আম নিয়ে যাবে বিক্রির জন্য। তবে তারা বলেছে , প্রথম দিন খুব বেশি আম পাড়ার পরিকল্পনা নেই। যেহেতু আম কম সেহেতু দাম বেশি পাবার আশা আছে সেজন্য আগে মার্কেটের অবস্থা বুঝে হাম নামাবে। দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু আজকে প্রথম দিন। তাই আমের দাম ঠিকঠাক বলা যাচ্ছে না। আশা করছি ভালো দাম পাব। কারণ গত বছরের থেকে এবার আম কম ধরেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এলাকার আম বাগানের মালিক আবু তালেব মাহমুদ (তালেব হাজী) জানান, বাজারে সর্বপ্রথম সাতক্ষীরার আম আসে। তার প্রায় ২০-২৫ দিন পর রাজশাহীতে আম পাড়া শুরু হয়। রাজশাহীর আমপাকা শুরু হওয়ার প্রায় একমাস পর আমাদের কানসাট এলাকায় আম নামানো শুরু হয়। আমার বাগানে গতবার অনেক আম হয়েছিল এবার মুকুল আশা সত্ত্বেও তেমন আম হয় নাই । আমার বাগানে যে পরিমাণ আম হয় রাজশাহীর বাজার ৪-৫ দিন চালানো সম্ভব । তবে আমার সালোক জিকির উদ্দিনের বাগানে অনেক আম এসেছে। গাছের যত্ন আর বিষ দেওয়া সত্বেও মুকুল টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি অনেক মুকুল জ্বলে গেছে। এক মাস পর বুঝতে পারব আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের দাম এবার কেমন পাবে কৃষকরা ।
রাজশাহীর একাধিক চাষীর কাছে জানা যায়, এবার গাছে আমের সংখ্যা অনেক কম। এজন্য ভালো দাম পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তবে যেহেতু গাছে আম কম, তাই আমাদের লোকসান হবার সম্ভবনাও রয়েছে। এবার আমের জন্য অফ ইয়ার। এরপরও আমের মুকুল ভালোই এসেছিলো এই অঞ্চলে। কিন্তু ফাল্গুনে একটানা বৃষ্টি হবার ফলে মুকুল নষ্ট হয়ে যায়। তবে দেরিতে যে মুকুলগুলো এসেছিলো এখন সেগুলোর আম টিকে আছে। মার্কেটে এবার আমদানি কম হবে যে কারণে আমের দাম বেশি হবে আশা করছি ।
এর আগে গত বুধবার (১২ মে) রাজশাহী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত মনিটরিং সংক্রান্ত সভায় আমপাড়া বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কৃষি বিভাগসহ আম সংশ্লিষ্ট বিভাগের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর গোপালভোগ বা রানিপসন্দ ২৫ মে, লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাত গাছ থেকে নামানো যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম; ১৫ জুন আম্রপালি এবং একই তারিখে ফজলি, ৫ জুলাই বারি-৪ আম, ১০ জুলাই আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গৌড়মতি ও ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মোছা. সাবিনা বেগম বলেন, রাজশাহীতে গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আমের সম্ভাব্য উৎপাদন ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন। এ বছর আমের আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৮ টন।