মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসছিল মর্নিং বার্ড নামের একটি ছোট লঞ্চ। যাত্রী ছিল প্রায় ৫০ জন। লঞ্চটি বুড়িগঙ্গা নদীতে একটি বড় লঞ্চের ধাক্কায় মুহূর্তের মধ্যে ডুবে যায়। এতে প্রাণ হারায় ৩৪ জন। ২০২০ সালের ২৯ জুন এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নৌপথে আরেক বড় দুর্ঘটনা ঘটে ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর। তখন রাত ৩টা। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ নামের একটি লঞ্চে আগুন লেগে যায়।
আগুন থেকে বাঁচতে মাঝ নদীতে অনেকেই ঝাঁপ দেয়। অনেককেই পরে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় প্রায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়। এসব দুর্ঘটনা আজও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে, যখন নৌনিরাপত্তার বিষয় আসে।
বর্তমানে নৌপথে অত্যাধুনিক লঞ্চ যুক্ত হচ্ছে। আধুনিক সেবা দিতে এগিয়ে থাকছে বড় লঞ্চগুলো। কিন্তু ছোট লঞ্চগুলো যাত্রী সেবার পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তিতেও পিছিয়ে রয়েছে। দেশের বিভিন্ন পরিবহনে কিছুটা হলেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু বেশির ভাগ নৌযান এখনো সনাতন পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে ‘নৌনিরাপত্তা সপ্তাহ-২০২৪’। এবারের প্রতিপাদ্য ‘দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌযান, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে রাখবে অবদান’ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় ৮৫ শতাংশ নৌযান নিবন্ধনের আওতাতেই নেই। ফলে সরকার চাইলেও দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। নিয়মিত হচ্ছে না নৌশুমারি। আবার নদীর দখল-দূষণ বাড়ছে, কমছে নাব্যতা।
পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ছোট নৌযানের বড় সমস্যা হলো নিবন্ধন নেই। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব যানের ফিটনেস নিয়ে কথা বলার সুযোগ থাকে না। সবার আগে এসব যানকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। তখনই কেবল আধুনিকায়ন করাসহ প্রযুক্তিনির্ভর এবং নিয়ন্ত্রিত চলাচলের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
ছোট লঞ্চে উন্নত সংকেতব্যবস্থা নেই : নৌযানগুলোতে নেই উন্নত সংকেতব্যবস্থা। রাতের চলাচলে মেলে না আধুনিক আলোক ব্যবস্থা। ছোট লঞ্চগুলো বড় লঞ্চের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে না। কত লঞ্চের ফিটনেস নেই তা-ও জানার সুযোগ নেই। কারণ প্রায় ৮৫ শতাংশ নৌযান অনিবন্ধিত।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, নৌনিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নৌযানে আধুনিক সংকেত স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। ইভিএমএনআইএস নামের একটি প্রকল্প চলমান আছে। এটি এই বছরেই শেষ হবে। এই প্রকল্পের অধীনে সংকেতব্যবস্থা আধুনিক করা হচ্ছে।
বৈধ নৌযানের সংখ্যা কত ? : বর্তমানে অভ্যন্তরীণ নৌপথের দৈর্ঘ্য বর্ষাকালে ২৪ হাজার কিলোমিটার। এটি শুষ্ক মৌসুমে ১৮ হাজার কিলোমিটারে নেমে আসে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ভেতরে চলাচল করা নৌযানের সংখ্যা ১৬ হাজার ৯৮০টি। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক মো. ইমরান উদ্দিন বলনে, অনিবন্ধিত ও ছোট নৌযানগুলো দুর্ঘটনায় বেশি আক্রান্ত হয়।