"প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে শিখন-শেখানো ও মূল্যায়ন"
প্রবন্ধ লেখক: জিনিয়া জিন্নাত, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শিবপুর, নরসিংদী।
আধুনিক শিক্ষাক্রমের পরিধি অনেক ব্যাপক। শিক্ষাক্রমকে কেবল পাঠ্য বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সকল অভিজ্ঞতার যোগফলই হলো প্রকৃত শিক্ষাক্রম। শ্রেণীকক্ষে, খেলার মাঠে, লাইব্রেরিতে, প্রদর্শনীতে শিশুরা পারস্পরিক ভাবের আদান-প্রদান ও সংযোগের মাধ্যমে যে বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা অর্জন করে তার সবগুলোই শিক্ষাক্রমের অংশ। প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের এ ধরনের পরিকল্পনার নাম প্রাথমিক শিক্ষাক্রম। কাদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে শিক্ষার্থী কী কী যোগ্যতা অর্জন করবে, কতদিন এ কার্যক্রম চলবে, কোন কোন বিষয় কত সময় যাবত কীভাবে কারা শিখবে, কী কী শিখন সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, শিক্ষা প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা কীভাবে অংশগ্রহণ করবে, শিক্ষার্থীদের অর্জনসমূহ কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে এ সবকিছুর বিবরণ প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে রয়েছে। বাংলাদেশের প্রাথমিক স্তরে ১৯৯২ সালে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রবর্তন করা হয়।
শিক্ষাক্ষেত্রে শিখন ও শেখানোর মধ্য দিয়ে কোন জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিপূর্ণভাবে আয়ত্ত করার পর শিশু তার বাস্তব জীবনে প্রয়োজনের সময়ে তা কাজে লাগাতে পারলে সেই জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে তার একটি যোগ্যতা বলা হয়। যেমন বাংলা বিষয়ে শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুদ্ধভাবে ও স্পষ্টস্বরে কথা বলতে পারার দক্ষতা আয়ত্ত করার পর শিশু যদি নিজ গৃহে এবং বন্ধুদের সঙ্গে শুদ্ধ ভাষায় ও স্পষ্ট স্বরে কথা বলতে পারে অর্থাৎ জীবনে সর্বক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করতে পারে তবে সেটি তার যোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য অর্জন উপযোগী সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা বা পারদর্শিতাকে ভিত্তি করে যে শিক্ষাক্রম প্রণীত হয় তাকে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম বলা হয়। ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত কোন কোন শ্রেণীতে কোন কোন প্রান্তিক যোগ্যতার কতটুকু অর্জন করবে তার জন্য পরিকল্পিত শিক্ষাক্রমই যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম। শিক্ষার্থীদের বয়স, মেধা ও চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে অর্জন উপযোগী যোগ্যতা চিহ্নিত করে প্রথমিক স্তরে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়। ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা শেষে যে নির্ধারিত যোগ্যতাগুলো অর্জন করবে বলে আশা করা হয় সেগুলো প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের প্রান্তিক যোগ্যতা।
এ শিক্ষাক্রমের উল্লেখযোগ্য দিক হলো বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা শেষে প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করে প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে বিষয় সংশ্লিষ্ট প্রান্তিক যোগ্যতার সংখ্যা একরকম নয়। আবার শিক্ষার্থীরা একবারে বা একসঙ্গে প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করবে না। ধাপে ধাপে বিভিন্ন শ্রেণীতে প্রান্তিক যোগ্যতার অংশ বিশেষ অর্জনের মাধ্যমে একটি প্রান্তিক যোগ্যতা পুরোপুরি অর্জনে সক্ষম হবে। ২০০২ সালে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রথমবারের মতো পরিমার্জন করে ৫০টি প্রান্তিক যোগ্যতা এবং জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে ২০১২ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বিভিন্ন শিক্ষানীতি, গবেষণা, নীতি-নির্ধারকগণের দিক নির্দেশনায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার দিনে দিনে পরিমানগত ও গুনগতমানের উন্নয়ন ঘটেছে। যেমন- শিশু ভর্তির হার বৃদ্ধি, ঝড়ে পড়ার হার হ্রাস, পাঁচ বছর মেয়াদি শিক্ষাচক্র সমাপ্তি হার বৃদ্ধি, শতভাগ উপবৃত্তির ব্যবস্থা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম পাঠদান পদ্ধতি, উপকরণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা ইত্যাদি।
আর শিক্ষার্থীর বিকাশ ও পরিবর্তন উদ্দেশ্য অনুযায়ী, কতটুকু কীভাবে সংগঠিত হচ্ছে তা জানার অন্যতম হাতিয়ার হলো মূল্যায়ন। মূল্যায়ন ছাড়া শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার সফলতার মাত্রা যাচাই করা যায় না। তাই মূল্যায়ন শিখন শেখানো প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষাদান পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গে মূল্যায়ন পদ্ধতির সামঞ্জস্য থাকা দরকার। মূল্যায়ন হলো একটি উপকরণ বা কৌশল, যার দ্বারা শিক্ষার্থীরা তাদের জন্য নির্ধারিত শিখনফল কতটা ভালোভাবে অর্জন করতে পেরেছে তা নিরুপণ করা বা মাপা যায়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর নির্ধারিত জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য তাকে সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে গাঠনিক মূল্যায়ন একটি অপরিহার্য কৌশল হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। সামষ্টিক মূল্যায়ন কোনো টার্ম বা কোর্সের শেষেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের একাধিক পর্যায়ে মূল্যায়ন করা হয়। যেমন-পাঠ চলাকালে শ্রেণী শিক্ষক দ্বারা, বছরের বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা দ্বারা এবং প্রাথমিক স্তর শেষে শিক্ষাথীদের মূল্যায়ন করা হয়। মূল্যায়ন ব্যবস্থায় মুখস্থ নির্ভরতা বেশি থাকায় শিক্ষার্থীরা কিছু বিষয় পড়ে পাশ করে পরবর্তী শ্রেণিতে অগ্রসর হওয়ার প্রবণতা রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের জ্ঞানকে প্রসারিত করার জন্য যোগ্যাতাভিত্তিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা উত্তরণ ঘটছে। ২০০৯ সালে প্রথম সারা দেশব্যাপী অভিন্ন প্রশ্নপত্রের আলোকে ৫ম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১২ সালে প্রথম যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নের আলোকে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালে সমাপনী পরীক্ষায় ১০% যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্র, ২০১৩ সালে ২৫% যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্রের আলোকে মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে ধাপে ধাপে উত্তরণ ঘটিয়ে ২০১৮ সাল থেকে শতভাগ প্রশ্নপত্রের আলোকে মূল্যায়ন করা হয়। মানের উৎকর্ষ সাধনের জন্য ৩য় শ্রেণী থেকেই যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্রের আলোকে মূল্যায়ন করা হয়।
সুতরাং প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের শিখন-শেখানো কার্যক্রম সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করে শিক্ষার্থীদের সঠিক ও যথাযথ মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
|
প্রবন্ধ লেখক: জিনিয়া জিন্নাত, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শিবপুর, নরসিংদী।
আধুনিক শিক্ষাক্রমের পরিধি অনেক ব্যাপক। শিক্ষাক্রমকে কেবল পাঠ্য বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সকল অভিজ্ঞতার যোগফলই হলো প্রকৃত শিক্ষাক্রম। শ্রেণীকক্ষে, খেলার মাঠে, লাইব্রেরিতে, প্রদর্শনীতে শিশুরা পারস্পরিক ভাবের আদান-প্রদান ও সংযোগের মাধ্যমে যে বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা অর্জন করে তার সবগুলোই শিক্ষাক্রমের অংশ। প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের এ ধরনের পরিকল্পনার নাম প্রাথমিক শিক্ষাক্রম। কাদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে শিক্ষার্থী কী কী যোগ্যতা অর্জন করবে, কতদিন এ কার্যক্রম চলবে, কোন কোন বিষয় কত সময় যাবত কীভাবে কারা শিখবে, কী কী শিখন সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, শিক্ষা প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা কীভাবে অংশগ্রহণ করবে, শিক্ষার্থীদের অর্জনসমূহ কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে এ সবকিছুর বিবরণ প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে রয়েছে। বাংলাদেশের প্রাথমিক স্তরে ১৯৯২ সালে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রবর্তন করা হয়।
শিক্ষাক্ষেত্রে শিখন ও শেখানোর মধ্য দিয়ে কোন জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিপূর্ণভাবে আয়ত্ত করার পর শিশু তার বাস্তব জীবনে প্রয়োজনের সময়ে তা কাজে লাগাতে পারলে সেই জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে তার একটি যোগ্যতা বলা হয়। যেমন বাংলা বিষয়ে শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুদ্ধভাবে ও স্পষ্টস্বরে কথা বলতে পারার দক্ষতা আয়ত্ত করার পর শিশু যদি নিজ গৃহে এবং বন্ধুদের সঙ্গে শুদ্ধ ভাষায় ও স্পষ্ট স্বরে কথা বলতে পারে অর্থাৎ জীবনে সর্বক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করতে পারে তবে সেটি তার যোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য অর্জন উপযোগী সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা বা পারদর্শিতাকে ভিত্তি করে যে শিক্ষাক্রম প্রণীত হয় তাকে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম বলা হয়। ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত কোন কোন শ্রেণীতে কোন কোন প্রান্তিক যোগ্যতার কতটুকু অর্জন করবে তার জন্য পরিকল্পিত শিক্ষাক্রমই যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম। শিক্ষার্থীদের বয়স, মেধা ও চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে অর্জন উপযোগী যোগ্যতা চিহ্নিত করে প্রথমিক স্তরে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়। ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা শেষে যে নির্ধারিত যোগ্যতাগুলো অর্জন করবে বলে আশা করা হয় সেগুলো প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের প্রান্তিক যোগ্যতা।
এ শিক্ষাক্রমের উল্লেখযোগ্য দিক হলো বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা শেষে প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করে প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে বিষয় সংশ্লিষ্ট প্রান্তিক যোগ্যতার সংখ্যা একরকম নয়। আবার শিক্ষার্থীরা একবারে বা একসঙ্গে প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করবে না। ধাপে ধাপে বিভিন্ন শ্রেণীতে প্রান্তিক যোগ্যতার অংশ বিশেষ অর্জনের মাধ্যমে একটি প্রান্তিক যোগ্যতা পুরোপুরি অর্জনে সক্ষম হবে। ২০০২ সালে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রথমবারের মতো পরিমার্জন করে ৫০টি প্রান্তিক যোগ্যতা এবং জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে ২০১২ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বিভিন্ন শিক্ষানীতি, গবেষণা, নীতি-নির্ধারকগণের দিক নির্দেশনায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার দিনে দিনে পরিমানগত ও গুনগতমানের উন্নয়ন ঘটেছে। যেমন- শিশু ভর্তির হার বৃদ্ধি, ঝড়ে পড়ার হার হ্রাস, পাঁচ বছর মেয়াদি শিক্ষাচক্র সমাপ্তি হার বৃদ্ধি, শতভাগ উপবৃত্তির ব্যবস্থা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম পাঠদান পদ্ধতি, উপকরণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা ইত্যাদি।
আর শিক্ষার্থীর বিকাশ ও পরিবর্তন উদ্দেশ্য অনুযায়ী, কতটুকু কীভাবে সংগঠিত হচ্ছে তা জানার অন্যতম হাতিয়ার হলো মূল্যায়ন। মূল্যায়ন ছাড়া শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার সফলতার মাত্রা যাচাই করা যায় না। তাই মূল্যায়ন শিখন শেখানো প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষাদান পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গে মূল্যায়ন পদ্ধতির সামঞ্জস্য থাকা দরকার। মূল্যায়ন হলো একটি উপকরণ বা কৌশল, যার দ্বারা শিক্ষার্থীরা তাদের জন্য নির্ধারিত শিখনফল কতটা ভালোভাবে অর্জন করতে পেরেছে তা নিরুপণ করা বা মাপা যায়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর নির্ধারিত জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য তাকে সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে গাঠনিক মূল্যায়ন একটি অপরিহার্য কৌশল হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। সামষ্টিক মূল্যায়ন কোনো টার্ম বা কোর্সের শেষেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের একাধিক পর্যায়ে মূল্যায়ন করা হয়। যেমন-পাঠ চলাকালে শ্রেণী শিক্ষক দ্বারা, বছরের বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা দ্বারা এবং প্রাথমিক স্তর শেষে শিক্ষাথীদের মূল্যায়ন করা হয়। মূল্যায়ন ব্যবস্থায় মুখস্থ নির্ভরতা বেশি থাকায় শিক্ষার্থীরা কিছু বিষয় পড়ে পাশ করে পরবর্তী শ্রেণিতে অগ্রসর হওয়ার প্রবণতা রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের জ্ঞানকে প্রসারিত করার জন্য যোগ্যাতাভিত্তিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা উত্তরণ ঘটছে। ২০০৯ সালে প্রথম সারা দেশব্যাপী অভিন্ন প্রশ্নপত্রের আলোকে ৫ম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১২ সালে প্রথম যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নের আলোকে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালে সমাপনী পরীক্ষায় ১০% যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্র, ২০১৩ সালে ২৫% যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্রের আলোকে মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে ধাপে ধাপে উত্তরণ ঘটিয়ে ২০১৮ সাল থেকে শতভাগ প্রশ্নপত্রের আলোকে মূল্যায়ন করা হয়। মানের উৎকর্ষ সাধনের জন্য ৩য় শ্রেণী থেকেই যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্রের আলোকে মূল্যায়ন করা হয়।
সুতরাং প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের শিখন-শেখানো কার্যক্রম সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করে শিক্ষার্থীদের সঠিক ও যথাযথ মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
|
|
|
|
প্রবন্ধ লেখক: জিনিয়া জিন্নাত, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শিবপুর, নরসিংদী
টেকসই মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে মূল শিক্ষার ভিত্তি। প্রাথমিক শিক্ষাকে মানসম্মত করার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। ২০০১ সালে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন বিশ্বে শিক্ষা ফোরাম থেকে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বিশ্ব ফোরাম থেকে ২০৩০ সালের জন্য গৃহীত হয়েছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। এর মূলমন্ত্র হচ্ছে Leave no one behind অর্থাৎ কাউকে পিছনে ফেলে নয়। যেখানে উন্নয়নের মূলমন্ত্রই হবে টেকসই উন্নয়ন, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ব্যবস্থার প্রচলন। এসডিজির-৪ নম্বরের অভীষ্ট হলো শিক্ষা ব্যবস্থায় সার্বিক গুণগত মানোন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের সকল প্রকার মানুষের জন্য টেকসই, কল্যাণকর জীবন ও জীবিকার সুযোগ এবং সম্ভাবনা সৃষ্টি করা। এসডিজির ৪.২ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা হলো ২০৩০ সালের মধ্যে সকল ছেলে মেয়ে যাতে প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাসহ শৈশবের একেবারে গোড়া থেকে মানসম্মত বিকাশ ও পরিচর্যার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে তার নিশ্চয়তা বিধান করা। ইতিমধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ এমডিজিতে সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ছয়টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় প্রাথমিক শিক্ষার পরিমাণগত অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসডিজি অভীষ্ট অর্জনে পরিমাণের চেয়ে টেকসই শিক্ষার গুণগত মানের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাই এসডিজি অর্জনের সফলতার জন্য প্রয়োজন গুণগত মানসম্পন্ন টেকসই প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা।
শিক্ষা মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মানবিক মূল্যবোধ বদলে দিতে সহায়তা করে। আর মানসম্মত শিক্ষা হচ্ছে সেই শিক্ষা যা একজন শিক্ষার্থীকে মানবিক, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ও প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে সহায়তা করে। এই শিক্ষা অর্জন করে শিক্ষার্থী ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রয়োগ করে উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। গুণগত শিক্ষার মাধ্যমে শিশুরা কেবল শিক্ষকের কাছ থেকেই শিক্ষা লাভ করে না বরং একে অন্যের কাছ থেকেও শেখে; কেবল শুনে নয় বরং দেখেও শেখে। এ ধরনের মিথস্ক্রিয়ার ফলে শিশুর সৃজনশীল শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের সুয়োগ হয়। ফলে তার অর্জিত শিক্ষা ও যোগ্যতা টেকসই হয়। প্রত্যেক শিক্ষকের পেশাগত দায়িত্বের অংশ হলো শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থী কী শিখতে পারছে, কী মাত্রায় এবং কতটা ভালোভাবে শিখতে পারছে সে সম্পর্কে অবহিত হয়ে সর্বোচ্চ শিখন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা যাচাইয়ের পাশাপাশি শিক্ষকের আত্মমূল্যায়নের সুযোগ সৃষ্টি করে। এতে টেকসই যোগ্যতাভিত্তিক মূল্যায়নে শিক্ষার্থীর জ্ঞানের পাশাপাশি দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে মূল্যায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বাস্তবধর্মী ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে। প্রগতিশীল বিশ্বে মেধাভিত্তিক, চিন্তাশীল, বিজ্ঞানমনস্ক স্মার্ট জাতি গঠনের জন্য বাস্তবভিত্তিক ও প্রয়োগমুখী শিক্ষা ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আর এ কারণেই টেকসই যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা আবশ্যক।
এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প, কর্মসূচি ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করে তা টেকসই করার লক্ষ্যে সরকার নিয়েছেন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা। সরকার ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (২০২১-২০২৫) প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত যেসকল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তা হলো - শিশু শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা, সকল বিদ্যালয়ে মানসম্মত বই সরবরাহ করা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মান উন্নত করা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখা এবং আওতা বৃদ্ধি করা, একীভূত শিক্ষার কার্যক্রম বৃদ্ধি, শতভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি কার্যক্রম সম্প্রসারণ, স্কুল ফিডিং/মিল কর্মসূচি সম্প্রসারণ, নতুন বিদ্যালয় এবং ক্লাসরুম নির্মাণ, বিদ্যালয়ের School Level Improvement Plan (SLIP) কার্যক্রমে এলাকাভিত্তিক সংগঠনসমূহের সহযোগিতা বৃদ্ধি, বিদ্যালয়সমূহের বার্ষিক ভিত্তিতে জরিপ সম্পন্নকরণ, প্রধান শিক্ষকদের লিডারশিপ প্রশিক্ষণ প্রদান, স্বচ্ছ আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং সুশাসন, Performance এবং Need-Based প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদি কর্মসূচি।
অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মানের টেকসই ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ এখন আরও একধাপ এগিয়ে। তাই বাংলাদেশে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষাও হচ্ছে টেকসই। ২০৪১ সালের উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক গড়ে উঠুক আন্তর্জাতিক মানের টেকসই মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত হয়ে - সেই প্রত্যাশা থাকুক আমাদের সকলের।
|
|
|
|
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
গতকাল শনিবার ১৮ মার্চ ২০২৩ইং সকাল ১০.০০মিঃ সময় দৈনিক ভোরের সময় প্রধান কার্যালয়ে পবিত্র কুরান তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সাংবাদিক প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কুরান তেলাওয়াত করেন পত্রিকার স্টাফ মোঃ রফিকুল ইসলাম।
দৈনিক ভোরের সময় পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হাবিবুর রহমান এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত দৈনিক ভোরের সময় পত্রিকার প্রকাশক মিসেস রিনা বেগম এবং অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন দৈনিক ভোরের সময় পত্রিকার চীফ রিপোর্টার মোঃ মশিউর রহমান পারভেজ এবং সিনিয়র রিপোর্টার মাহবুবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচনা করেন দৈনিক ভোরের সময় পত্রিকার অনলাইন সম্পাদক ও বিশেষ প্রতিনিধি, রাফিউর রহমান অয়ন।
অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্বাবাধানে ছিলেন দৈনিক ভোরের সময় পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি নাজমুল হোসেন সাগর। উক্ত সম্মেলনে আগত জেলা-উপজেলা প্রতিনিধিদের নিকট হতে নানা সমস্যার কথা শোনেন এবং সকল সাংবাদিক প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নর উত্তর ও বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হাবিবুর রহমান। অনুষ্ঠান আরো উপস্থিত ছিলেন- ভোরের সময় পত্রিকার সকল কর্মচারীবৃন্দ ।
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
প্রকাশক: রিনা বেগম
প্রধান সম্পাদক : মো: হাবিবুর রহমান
প্রকাশক কতৃক ৫১/৫১ এ পুরানা পল্টন থেকে প্রকাশিত ।
সোনালী প্রিন্টিং প্রেস ২/১/এ ইডেন ভবন ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ।
বার্তা
ও
বানিজ্যিক কার্যালয়
: ৫১/৫১ এ পুরানা পল্টন (৪র্থ তলা) ,
ঢাকা - ১০০০।
ফোন: ০২২২৩৩৮০৮৭২ , মোবাইল: ০১৭১১১৩৬২২৬
Web: www.bhorersomoy.com E-mail : dbsomoy2010@gmail.com
|
|
|
All Right Reserved By www.bhorersomoy.com
|
|
|