ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির মারাত্মক প্রভাব পড়েছে কুষ্টিয়ার চালের বাজারে। চালের দাম যেন আকাশ ছুঁতে চলেছে। কুষ্টিয়ার বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি ৪ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। চালের এই দাম বৃদ্ধির লাগাম যেন কিছুতেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন সামনে চালের দাম আরো বৃদ্ধি পাবে। দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধির কারণে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষকে। শুধু চাল নয়, কুষ্টিয়ার বাজারে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কাঁচামরিচ, সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল পণ্যের দাম। এর মধ্যে ২৭০ টাকা খাঁচি (৩০ পিচ) ডিমের দাম বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও। চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে গিয়ে খুচরা ব্যবসায়ী ও একাধিক মিলারের সঙ্গে কথা হয়। তাদের দাবি মূলত তিনটি কারণে চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রথমত সরকার ডিজেলের মূল্য এক লাফে লিটার প্রতি ৩৪ টাকা বৃদ্ধি করায় পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। যে কারণে ব্যবসায়ীদের চালের দাম বাড়াতে হচ্ছে। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন বাজারে ধানের দাম চড়া, সেই সঙ্গে সংকটও রয়েছে। ধান পাওয়া গেলেও দাম বেশি। ধানের দাম চড়া হওয়ায় চালের দামেও প্রভাব পড়ছে। তৃতীয় কারণ সরকার চাল আমদানির সুযোগ দিলেও সেখানে ২৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। অতিরিক্ত এই ভ্যাট আরোপের কারণে ব্যবসায়ীরা কেউ চাল আমদানি করতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। কুষ্টিয়ার খাজানগরের গোল্ডেন অটো রাইচ মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুজ্জামান জিকু বলেন, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ট্রাক প্রতি পরিবহন খরচ ধান ও চাল উভয় ক্ষেত্রেই কমপক্ষে ২ হাজার টাকা বেড়েছে। এছাড়াও লোডশেডিংয়ের কারণে মিলের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। জেনারেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে করে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান, চালের দামের লাগাম যদি এখনই টেনে না ধরা যায় তাহলে সামনে আমাদের হয়তো আরো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। তিনি চালের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকারকে দুটি পরামর্শ দিয়েছেন। বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে মজুতকৃত প্রায় ১৫শ লাখ মেট্রিক টন চাল এই মুহূর্তে বাজারে ছেড়ে দেওয়া এবং চাল আমদানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা। এছাড়াও কঠোর বাজার মনিটরিং করার দাবি জানান চালকল মালিক সমিতির এই নেতা। কুষ্টিয়ার খাজানগরকে বলা হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম। আর বিশেষ করে চিকন বা সরু (মিনিকেট) চালের জন্য প্রসিদ্ধ এবং সর্ববৃহৎ মোকাম এটি। ছোট বড় মিলিয়ে এখানে প্রায় ২শ থেকে ২৫০ ট্রাক লোড হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বাজারে চাল সরবরাহ করে থাকে। যে কারণে কুষ্টিয়ায় ধান-চালের দাম বৃদ্ধির প্রভাব গিয়ে পড়ে গোটা দেশের ওপর। ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির দুদিন পর থেকেই কুষ্টিয়ার বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি ৪ থেকে ৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে মিনিকেট চাল কেজি প্রতি ৪ টাকা, কাজললতা আর আঠাশ চাল কেজি প্রতি ৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে কুষ্টিয়ার বাজারে অটোমিলের মিনিকেট চাল ৭০ টাকা, সাধারণ মিনিকেট ৬৮ টাকা, কাজললতা ৬০ টাকা, সাধারণ কাজললতা ৫৮ টাকা, অটোমিলের বাসমতি চাল ৮২ টাকা, সাধারণ বাসমতি ৭৮ টাকা, আঠাশ চাল ৫৫ টাকা এবং নাজিরশাইল চাল ৮২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ির উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহামুদ জানান, প্রকৃতপক্ষে ভারত, বাংলাদেশ কোথাও মিনিকেট নামে কোনো ভেরিয়েন্ট নেই। তবে বর্তমানে বিরিধান ৬৩, বিরি ৮১ সহ চিকন যে সমস্ত ধানের জাত রয়েছে আমাদের দেশের কৃষকরা সেই ধানগুলো মিনিকেট ধান হিসেবে আবাদ করছেন এবং এই ধানগুলোই বাজারে মিনিকেট ধান হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। কুষ্টিয়ার বাজারে মিনিকেট ধান বর্তমানে ১৭৫০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে কুষ্টিয়ায় জেলাতেও বোরো মৌসুমে সামান্য কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে মিনিকেট ধানের আবাদ হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে চিকন বা মিনিকেট ধানের যে আবাদ হয় তা সারা দেশের মিনিকেট চালের প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ২৫ ভাগের মতো।
|