বুধবার, এপ্রিল ২, ২০২৫
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * রাজনীতির কারণে হুমকির মুখে, অনেক পরিবার   * বাংলাদেশ ট্রান্সপোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিয়নের দোয়া মাহফিল ও ইফতার   * বিআরটিএ মোবাইল কোর্টের অভিযান: কোটবাড়ি ও গাবতলির ৫টি ওয়ার্কশপে সতর্কতা, মুচলেকা গ্রহণ   * কেরানীগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক লীগ  পান্ত সরকার, জুলাই আগস্টের গুলি ছোড়ার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য   * পূবালী ব্যাংকে শরীফুন নাহারের ডিএমডি পদোন্নতিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ   * মুসলিম নগর এতিমখানার এতিম ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের  ঈদ উপহার সহ ইফতার মাহফিল করলেন -ডিসি   * বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা সংরক্ষণে চীনের সহযোগিতা নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে --ডিসি   * গঙ্গার পানিবণ্টন : সফল হলো না বাংলাদেশ-ভারত বৈঠক   * নির্বাচিত হয়েই ট্রাম্পকে যে কঠোর বার্তা দিলেন কার্নি   * ড. ইউনূসের কাছ থেকে পরবর্তী সরকারপ্রধানরা যা শিখতে পারেন  

   মতামত
বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ
  Date : 03-04-2024

তাপস হালদার

বাঙালি জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন ১৭ মার্চ। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রিয় বাংলাদেশকে শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করার নতুন শপথ নিতেই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন জাতীয় শিশু দিবস পালিত হচ্ছে। তার কর্ম ও রাজনৈতিক জীবনের অসামান্য গৌরবের ইতিহাস প্রতিটি শিশুর মাঝে চারিত্রিক দৃঢ়তার ভিত্তি গড়ে উঠুক এটিই জাতীয় শিশু দিবসের মূল প্রতিপাদ্য।

হাজার বছর আগে বাঙালি জাতির জন্ম হলেও জাতি হিসেবে কোনো স্বীকৃতি ছিল না, নিজস্ব কোনো জাতিস্বত্বা ছিল না, স্বাধীন কোনো ভূ-খণ্ডও ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির সেই আক্ষেপ মোচন করেছেন। তিনি পৃথিবীর মানচিত্রে বাঙালিদের জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়, বাঙালি জাতির আস্থার ঠিকানা। বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল। তিনি দেশের জন্য জীবনের সবটুকু বিলিয়ে দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শৈশব থেকেই অন্যায়ের প্রতি যেমন ছিলেন প্রতিবাদী, ঠিক তেমনই গরীব অসহায় মানুষদের প্রতি ছিলেন সহানুভূতিশীল। এই অসাধারণ গুনটি তার পরবর্তী রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। স্কুল বয়স থেকেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ম্যাট্রিক পাশের পর কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। সেখানেই রাজনৈতিক জীবনের বড় পরিবর্তন আসে। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীদের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সরাসরি জড়িয়ে পড়েন।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই বাঙালিদের ওপর অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নির্যাতন নেমে আসে। পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে তরুণ শেখ মুজিব। ধীরে ধীরে তিনি বাঙালিদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। প্রতিবাদকে সংগঠিত করতে তিনি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সে লক্ষ্যেই ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠন করেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ। আর ১৯৪৯ সালে ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হলে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক ও কারাবন্দী থাকা অবস্থায় তিনি যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাংগঠনিক দক্ষতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে খুব দ্রুতই দলের নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুর হাতে চলে আসে। পর্যায়ক্রমে সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে সম্মিলিত বিরোধী দলগুলো শেরে বাংলা ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে মুসলিম লীগকে পরাজিত করে সরকার গঠন করে। মন্ত্রীসভার কনিষ্ঠতম সদস্য হিসেবে শপথ নেন শেখ মুজিবুর রহমান।

৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয়দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে উঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার পক্ষে বাংলার জনগণ নিরঙ্কুশ রায় দেয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো বাংলা। দূরদর্শী নেতা বঙ্গবন্ধু বুঝে যায় একমাত্র স্বাধীনতা ছাড়া বাঙালিদের মুক্তি সম্ভব নয়। সেজন্যই ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

তারপর ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হায়েনারা ঢাকার ঘুমন্ত মানুষের ওপর অপারেশন সার্চলাইটের নামে গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারপর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস বঙ্গবন্ধুর শারিরীক অনুপস্থিতি না থাকলেও বঙ্গবন্ধুর নামেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। মুজিবনগর সরকারে বঙ্গবন্ধুই রাষ্ট্রপতি ছিলেন। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাকে বুকে ধারণ করেই মুক্তিযুদ্ধ করেছে। আর বঙ্গবন্ধুর ডাকেই বাঙালিরা মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বঙ্গবন্ধু পান ‘জাতির পিতা’র স্বীকৃতি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলে তার হাতেই বাংলাদেশের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর হাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়।

টুঙ্গিপাড়ার ‘খোকা’, রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে প্রিয় ‘মুজি্ব ভাই`, মুক্তিকামী মানুষের ভালোবাসায় অর্জন করলেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে হয়ে ওঠেন ‘জাতির পিতা` আর একটি বাঙালিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়ে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’তে পরিণত হন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করতেন দেশটি হবে সবার। তিনি পাকিস্তানি দ্বিজাতি তত্ত্বকে ধারণ করতেন না। প্রত্যেকটি নাগরিকের সমানাধিকরণে বিশ্বাস করতেন। এজন্যই বাংলাদেশের সংবিধানের জাতীয় চারটি স্তম্ভের একটি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে স্থান দিয়েছিলেন। তিনি ধর্মকে রাজনীতির বাইরে রেখেছিলেন। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে স্থান দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমরা ধর্মকে আইন দ্বারা পরিবর্তন করব না। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, হিন্দুরা তাদের ধর্ম পালন করবে, বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে, খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে। আমাদের শুধু আপত্তি হলো এই যে ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না।’

বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিশালতা পরিমাপ করা খুবেই কঠিন। তিনি ছিলেন মহাসাগরের মতো। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়া চীন` বইগুলো পড়লে তার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে। কঠিন দেশপ্রেম, বিশাল মহানুভবতা, দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্ব, মানুষের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি বাঙালির প্রতিটি সংকটে পথ নির্দেশনা দিয়েছেন। এখনও বঙ্গবন্ধুর আদর্শই বাঙালির মুক্তির পথ দেখায়।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ-দৌলার পরাজয়ের পর স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। তারপর থেকে বাঙালিদের একটি স্বাধীন ভূ-খণ্ডের জন্য বিভিন্ন সময়ে অনেক সূর্য সন্তান স্বপ্ন দেখেছেন, সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু কেউই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে পারেননি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই মহান নেতা যিনি শুধু স্বপ্নই দেখেননি, স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছেন। ২১৬ বছর পর ১৯৭১ সালে বাঙালিদের জন্য স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এজন্যই বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু এক ও অবিচ্ছেদ্য। একে অপরের পরিপূরক। তিনিই বাঙালির ধ্রুবতারা, আলোর দিশারী। ভারতের মহাত্মা গান্ধী, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, ভিয়েতনামের হো চি মিন, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটো প্রত্যেকেই স্ব স্ব দেশের জাতির পিতা। তাদের ছাড়া যেমন সেসব দেশের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না, ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।

বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে হলে বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস জানতে হবে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একে অপরের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। একটি থেকে অপরটি আলাদা করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। স্বাধীন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর অমর কীর্তি। কবি মহাদেব সাহা ‘আমি কি বলতে পেরেছিলাম?’ কবিতায় বলেছেন, ‘তাই আমার কাছে বার্লিনে যখন একজন ভায়োলিনবাদক/বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল/আমি আমার দুপকেট থেকে ভাঁজ করা একখানি ১০ টাকার নোট বের করে শেখ মুজিবের ছবি দেখিয়েছিলাম/বলেছিলাম, দেখো এই বাংলাদেশ।’

লেখক :সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।



  
  সর্বশেষ
রাজনীতির কারণে হুমকির মুখে, অনেক পরিবার
বাংলাদেশ ট্রান্সপোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিয়নের দোয়া মাহফিল ও ইফতার
বিআরটিএ মোবাইল কোর্টের অভিযান: কোটবাড়ি ও গাবতলির ৫টি ওয়ার্কশপে সতর্কতা, মুচলেকা গ্রহণ
পূবালী ব্যাংকে শরীফুন নাহারের ডিএমডি পদোন্নতিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশক: রিনা বেগম
প্রধান সম্পাদক : মো: হাবিবুর রহমান
প্রকাশক কতৃক ৫১/৫১ এ পুরানা পল্টন থেকে প্রকাশিত । সোনালী প্রিন্টিং প্রেস ২/১/এ ইডেন ভবন ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত । বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : ৫১/৫১ এ পুরানা পল্টন (৪র্থ তলা) , ঢাকা - ১০০০।
ফোন: ০২২২৩৩৮০৮৭২ , মোবাইল: ০১৭১১১৩৬২২৬