পুরান ঢাকার দেবীদাস ঘাটের একটি আলোচিত বাড়ির নাম ‘দাদাবাড়ি ভবন’। রাজকীয় বাড়িটির ফটকে লেখা ‘চাঁন সরদার দাদাবাড়ি ভবন’। বাড়িটি যেন বিশেষ কোনো বাহিনীর সদর দপ্তর! বাড়িতে আলাদা ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক; ছিল বিশেষায়িত ড্রোন থেকে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা। ছিল অস্ত্রাগার, শত শত ওয়াকিটকি আর টর্চার সেল এবং আয়নাঘর-সদৃশ গোপন কুঠুরি। ছিল মদের বারসহ নানা বিলাসী আয়োজন। ২০২০ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে বাড়ি থেকে ড্রোন, অবৈধ অস্ত্র, ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম উদ্ধারের পর কিছুদিন বাড়িটি ঘিরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ ছিল। হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর এবং হাজী সোলায়মান সংসদ সদস্য হওয়ার পর আগের অবস্থায় ফিরে যায় বহুল আলোচিত সেই দাদাবাড়ি ভবন। এরপর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সেই বাড়ি থেকে অনেক কিছুই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
বাড়িটির মালিক পুরান ঢাকার আলোচিত ব্যবসায়ী হাজী সেলিম। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর তার দুই ছেলে হাজী সোলায়মান ও ইরফান বাবার অবৈধ কারবারের নিয়ন্ত্রণ নেন। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সোলায়মান ও ইরফান বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। সর্বশেষ বুধবার মধ্যরাতে চকবাজার থানা পুলিশ গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে সোলায়মান সেলিমকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে আদালতে হাজির করার পর পুলিশ তাকে জেলহাজতে পাঠায়।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার জসিম উদ্দিন বলেন, রোববার মধ্যরাতে চকবাজার থানার একটি মামলায় গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাবেক এমপি হাজী সোলায়মান সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা রয়েছে। সোলায়মান সেলিমের বিরুদ্ধে হাজী সেলিমের অবৈধ দখল, চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য রক্ষা, বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এমপি হওয়ার আগে ও পরে বিভিন্ন ব্যক্তিকে হুমকি ও হামলার অভিযোগ রয়েছে সোলায়মানের বিরুদ্ধে। পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাজী সেলিমের হয়ে বাদামতলী, চকবাজার, ইসলামপুর, চকমোঘলটুলী, বুড়িগঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে চাঁদাবাজদের আলাদা গ্রুপ রয়েছে সোলায়মানের। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে হাজি সেলিম ও তার লোকজন আত্মগোপনে চলে যান। এই সুযোগে হাজী সেলিমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মোশাররফ হোসেন ওরফে কালু হাজি পুরান ঢাকায় সেলিম নিয়ন্ত্রিত এলাকায় চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নেন। এখন হাজী সেলিম বাহিনীর হয়ে কালু এসব অপকর্ম করছেন।