|
অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় বীমা শিল্পের বিকাশ অপরিহার্য |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার ফলে এই দেশ আজ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এই অগ্রযাত্রায় বীমা খাতের অবদান অনস্বীকার্য। বীমাশিল্প বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ফলে এ শিল্পের উন্নয়নে শুধু বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে ইতিবাচক নীতিগত সহায়তা নয়, বরং বিভিন্ন সেক্টর থেকেও যথাযথ মনোযোগ এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন। অর্থনীতির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাও সমানভাবে গুরুত্ব পায়, যা অধিকাংশ উন্নত দেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সময় বিবেচনায় নেয়। বীমা খাত ব্যক্তি, পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিয়ে একটি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করে। ফলে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের প্রবৃদ্ধির পথও সুগম হয়। যদিও বাংলাদেশে বীমা শিল্প এখনও বিকাশমান, এটি ঐতিহ্যগতভাবে সমাজের উচ্চবিত্ত অংশকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়ে এসেছে। অথচ নিম্ন-মধ্যম এবং নিম্নআয়ের বিশাল জনগোষ্ঠী এখনো এই সেবার আওতার বাইরে রয়ে গেছে। মূলধারার বীমা কোম্পানিগুলো শহরভিত্তিক কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ থাকায় গ্রামীণ ও আধা-শহর এলাকায় বসবাসকারী মানুষের কাছে এসব সেবা পৌঁছায় না। অথচ এই জনগোষ্ঠীই বেশি ঝুঁকির মুখে থাকে। তাই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এদের বীমাসেবার আওতায় আনার উদ্যোগ প্?য়োজন। অবশ্য গত ৫৪ বছরে দেশের অর্থনীতি যতটুকু এগিয়েছে, বীমাশিল্প সেভাবে এগোতে পারেনি। বর্তমানে দেশে ৪৬টি সাধারণ ও ৩৬টি জীবন বীমা কোম্পানি রয়েছে। কিন্তু প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র চারজনের বীমা রয়েছে। প্রায় সাড়ে সতের কোটি জনসংখ্যার তুলনায় যা খুবই নগণ্য। অন্যদিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সম্পদ যতটা বেড়েছে তার বিপরীতেও বীমা কম। বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যবসা ও ভবন বীমার আওতায় নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে আগামী দিনে দেশে বীমা খাত সবচেয়ে সম্ভবনাময় ক্ষেত্র। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বীমার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ানো। বীমা যে ব্যক্তি বা সম্পদের নিরাপত্তা দেয়, তা কথায় না বলে কাজে প্রমাণ করতে হবে। এজন্য সরকারকে আইন প্রয়োগে যেমন কঠোর হতে হবে, তেমনি নীতিসুবিধাও দিতে হবে।পাশাপাশি বীমা কোম্পানিগুলোকে দাবী পরিশোধ লেনদেন ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বজায় রাখা, জনবলের দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বীমাসেবার বিস্তার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমেও গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। বীমা কোম্পানি, এনজিও এবং এমএফআই-এর সমন্বয়ে মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স চালু করা, প্রিমিয়াম সংগ্রহ, দাবি নিষ্পত্তিসহ অন্যান্য প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির সংযোজন ভবিষ্যতের জন্য পথ তৈরি করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে, বৈশ্বিক মহামারীর সময়েও অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিকূলতার মধ্যে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে এবং নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করেছে। তারা ব্যক্তি ও কমিউনিটিকে সহযোগিতার পাশাপাশি নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কৌশল শিখিয়েছে। সময়োপযোগী অবকাঠামো ও পরিষেবা উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের বীমা খাতেও নতুন পথ উন্মোচিত হচ্ছে। সরকার এবং বীমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষও বীমা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচার প্রচারণা ও নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এর ফলে বীমা খাতে অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও প্রিমিয়াম আয়ে প্রতিবছর ক্রমবর্ধমান হারে প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা যাচ্ছে। ২০২২ এবং ২০২৩ সালে বাংলাদেশের বীমা খাত থেকে মোট গ্রস প্রিমিয়াম প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ১০.৬৭% এবং ৫.৩৮%। ২০২২ ও ২০২৩ সালে মোট প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৭,২৯৬.৪৩ কোটি এবং ১৮,২২৬.৭৭ কোটি টাকা। বর্তমান অবস্থায় নানা বাস্তবমুখী ও আধুনিক পদক্ষেপে বাংলাদেশের বীমা খাতকে মানুষের স্বারপ্রান্ত পৌছানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বীমা খাত আরো আগ্রজ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমি মনে করি। লেখক- প্রবীর চন্দ্র দাস এফসিএ
|
|
|
|
|