আবুল মনসুর আহমেদ বিশেষ প্রতিবেদকঃ
২০৩০ সাল নাগাদ এআই চিপের বাজারহিস্যা ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ প্রতিদিন নতুন মাত্রায় পৌঁছাচ্ছে। আর ভবিষ্যতে প্রযুক্তি খাতের নেতৃত্বে থাকবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)। চিপ উৎপাদনে এ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতে ও উন্নয়নে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম বাড়াতে ২০৩০ সাল নাগাদ ৬৪ কোটি ২৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবে দেশটি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর পরবর্তী প্রজন্মের চিপ তৈরির দিক থেকে বিশ্ববাজারে অন্যতম দেশে পরিণত হতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া। তিনটি খাতে দেশটির সরকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য বিনিয়োগ করবে। এগুলো হলো অতিরিক্ত ডাটা সেন্টার তৈরি, এআই চিপ স্টার্টআপগুলোর সঙ্গে কাজ করা এবং ক্লাউড পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করা। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এআই সেমিকন্ডাক্টর, ফাইভজি ও সিক্সজি সংযোগ, কোয়ান্টাম, মেটাভার্স ও সাইবার নিরাপত্তা এ ছয়টি প্রযুক্তির উন্নয়নে রোডম্যাপ প্রণয়ন করে দ. কোরিয়া। এটি কে-ক্লাউড অ্যান্ড দ্য কোরিয়া ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজি নামে পরিচিত। ২০৩০ সাল নাগাদ এআই চিপের বাজারহিস্যা ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সিউল দুটি ডাটা সেন্টার স্থাপনের কথা ভাবছে। এগুলো নিউরাল প্রসেস ইউনিট (এনপিইউ) ফার্ম নামে পরিচিতি পাবে। এপ্রিল থেকে শহরটি এআই চিপ উৎপাদনকারী ও ক্লাউড ফার্ম নিয়োগ দেয়া শুরু করবে বলে সূত্রে জানা গেছে। এসব ডাটা সেন্টারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর কোনো বিদেশী চিপ ব্যবহার করা হবে না। এছাড়া ২০২৪ সালের আগে ডাটা সেন্টারগুলোর কার্যক্রম শুরু হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই।
এআই চিপ উৎপাদনকারী রেবেলিওনস, সাপিওন কোরিয়া ও ফুরিওসাএআই ডাটা সেন্টারের চুক্তি পেতে কয়েকটি ক্লাউড পরিষেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একত্রে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো নাভের ক্লাউড, কেটি ক্লাউড, কাকাও ক্লাউ ও এনএইচএন। উইওনিউজ জানায়, চ্যাটবট এআই অ্যাপ্লিকেশনের জন্য এনভিডিয়া এ১০০ চিপ তৈরি করেছে। তবে এর তুলনায় রেবেলিওনের তৈরি এআই চিপ ২০ শতাংশের মতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকে। কোরিয়ার ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজির অন্যতম প্রধান ফিচার হলো কে-ক্লাউড প্রকল্প। এর মাধ্যমে পাবলিক ও প্রাইভেট এআইনির্ভর ক্লাউড সার্ভিসগুলোর গতি বাড়ানোর পাশাপাশি ডাটা সেন্টারগুলোতে কম শক্তিশালী এআই সেমিকন্ডাক্টর স্থাপনের বিষয় রয়েছে। কে-ক্লাউড প্রকল্পটি মূল পরিকল্পনার একটি অংশ। এর মাধ্যমে ডাটা সেন্টারগুলোতে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ের নিউরাল প্রসেসিং ইউনিট সরবরাহ করবে। এছাড়া ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত রিসোর্স শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ক্লাউডভিত্তিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স পরিষেবা নিশ্চিত করা হবে। এটি এমন একটি প্রকল্প যার মাধ্যমে বিদ্যমান এআই বা ইন্টারনেটভিত্তিক রিসোর্স শেয়ারিং ক্লাউড সার্ভিস প্রকল্প যুক্ত করার মাধ্যমে চলতি বছর ৩ হাজার ৭৬০ কোটি ওন পাবলিক অফার করবে। ২০২৫ সাল নাগাদ এ পরিমাণ ১০ হাজার কোটি ওন ছাড়াবে। কে-ক্লাউড প্রকল্পের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর চিপ বাজারে নিজস্ব অবস্থান তৈরিতে কাজ করছে দক্ষিণ কোরিয়া। অন্যদিকে নাভের ও কাকাওয়ের মতো স্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইংরেজি ভাষায় কথা না বলা দেশগুলোর জন্য চ্যাটজিপিটির মতো প্রোগ্রাম তৈরির কথা ভাবছে। কোরিয়াজুংঅ্যাংডেইলি চ্যাটবট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয় ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি ইংরেজিতে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর সহজে দিতে পারছে। কিন্তু এদিক থেকে কোরিয়ান ভার্সনটি ততটা উন্নত নয়। যে কারণে একই অঞ্চলে থাকা একাধিক প্রতিষ্ঠান এআই চ্যাটবটের উন্নয়নে প্রতিযোগিতায় নামতে পারবে। অন্যদিকে এশিয়ার দেশ হিসেবে সেমিকন্ডাক্টর অ্যাসেম্বল ও ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ডিজাইনে বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে সিঙ্গাপুর। সম্প্রতি দেশটির এক শীর্ষ কর্মকর্তা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বাণিজ্য ও প্রযুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বিরোধের কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।
|