ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে তার পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার স্থলে বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের কর্মকর্তা সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাসকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
রোববার (২৩ জুন) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মকিমা বেগম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সদস্য (টেকনিক্যাল) সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাসকে ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনে এই আদেশ জারি করা হয়েছে এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী অর্থ বিভাগ থেকে সময় জারি করা আদেশে উল্লিখিত হারে ও শর্তে কার্যভার ভাতা পাবেন এবং অবশ্যই অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত পদের সঙ্গে ‘অতিরিক্ত দায়িত্ব’ লিখতে হবে।
এর আগে, রোববার আরেক প্রজ্ঞাপনে মো. মতিউর রহমানকে বর্তমান দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া হারিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদও। একই দিনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করতে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে।
সব হারানোর পেছনে রয়েছে ‘ছাগলকাণ্ড’। একজন সরকারি কর্মকর্তার ছেলের বিপুল পরিমাণ টাকায় গরু-ছাগল কেনা নিয়ে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে মতিউর রহমান দাবি করেন, ইফাত তার ছেলে নন। এমনকি এই তরুণ তার পরিচিতও নয়। এই ঘটনার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে মতিউর রহমানের বিপুল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসে।
অনুসন্ধানে ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, বরিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় মতিউরের নামে বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদের খোঁজ মিলেছে।
জানা গেছে, মতিউরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আছে শতকোটি টাকা। তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান। এ দম্পতির মেয়ে ফারজানা রহমান ইস্পিতা ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা জমা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
মতিউরের ঘনিষ্ঠ কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এরপর মতিউর রহমান ভারত থেকে সরাসরি দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারেন। প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট তাকে দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছে।